আজ রূপার বিয়ে

Tareq Aziz

আজ রূপার বিয়ে। তার খুশি যেন আর ধরে না। নববধূ বিয়ের দিন এত হাসাহাসি করছে যে মানুষ দেখে কনফিউজড হয়ে যাবে, এটা কি আসলে লাভ ম্যরেজ না এরেঞ্জ ম্যরেজ। সহজ কথায় রূপার এমনিতেই হাসির রোগ আছে, কোন কারণ ছাড়াই হাসতে পারে। তারপর আজ এত হাসছে যে, মন জানতে আকুপাকু করছে বিবাহের আগে তার কত বছরের প্রেম ছিল। কিন্ত কিভাবে জিজ্ঞেস করবো ভেবে পাচ্ছিনা।

কানের কাছে যেয়ে বললাম,
কি রূপা আপু, ভাইয়ার সাথে ফোনে কথা হয়েছে?
-হ্যাঁ হয়েছে, আরে শোন না কি যে সমস্যায় আছি, কি যে করি, এর থেকে পরিত্রাণের উপায় আছে?
রূপা আপুর কথা শুনে নড়েচড়ে সিরিয়াস হয়ে বসলাম। আবার কি সমস্যা হলো, বিয়ে মানেই তো সমস্যা।
খুব আগ্রহের সহিত করুণ কন্ঠে জানতে চাইলাম কি হয়েছে আপু?

-আর বলো না, তোমার ভাইকে বলছি যে আমাকে নিতে আসার সময় প্রাইভেট কার নিয়ে আসতে, সে তা করবেনা।
-কি বলেন আপু, প্রাইভেট কার ছাড়া কি নতুন বৌ নিয়ে যাওয়া যায়?
-কি বলবো, আমার শশুরের একমাত্র ছেলে সে। তাই শশুরের শখ, ছেলের বৌকে ঘোড়ার গাড়িতে করে নিয়ে যাবে।
আমি অবাক চোখে বললাম, ভালো তো, কি সমস্যা?
-আরে ঘোড়ার গাড়িতে উঠলে আমার ভীষণ হাসি পায়। পরে যদি হাসতে হাসতে পড়ে যাই?
“উফ, শুনে এক প্রকার বিরক্ত লাগলো, এই সিলি ম্যাটারটা নিয়ে কেমন ঢং করলো”

তো এই কথা আপনার বরকে বলেন।
-বলছি তো। সে বললো সমস্যা নাই পড়ে গেলে আমি জড়িয়ে ধরে রাখবো।
লে হালুয়া….
তাদের কাহিনী শুনে তো এক প্রকার বিশ্বাস হয়ে গেল যে বিয়ের আগে প্রেম ছিল।
হঠাৎ সাথি আপুকে দেখে তার বিয়ের কথা মনে পড়লো। সাথি আপু হলো, রুপার বড় বোন।

এক বছর আগে তার বিয়ে হয়েছে। সত্যি কথা বলতে, আমি আমার জীবনে বিয়েতে কাউকে এতো কাদঁতে দেখিনি। কান্না দেখে মনে হচ্ছিল কেউ মারা গেছে। অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, তার কারো সাথে প্রেম ছিলো, জোর করে ধরে তাকে বিয়ে দেয়া হচ্ছে। সাথি আপুর মা তাকে দুটো থাপ্পড় দিয়ে বললো- এখন বিয়ে পড়ানো হবে, একদম কাঁদবি না। কে শোনে কার কথা? এদিকে সাথি আপুর মেকাপ পুরো নষ্ট, সব ধুয়েমুছে উঠে গেছে। ওদিকে পার্লার থেকে যে বিউটিশিয়ান নিয়ে আসা হয়েছিল, সেও রাগ করে উঠে গেছে। এত কষ্ট করে করা মেকাপ সব পাঁচ মিনিটে নষ্ট করে দিলো? পরে গ্রামের এক মেয়েকে ধরে আপুকে কোন রকমে সাজানো হয়।

এতকাহিনী দেখে আন্টির মাথা পুরো নষ্ট। পরে যদি মেয়ের কান্নার জন্য বিয়ে ভেঙে যায়, তখন মাথা কাটা যাবে। সাথি তার প্রথম মেয়ে। তাই বিশাল আয়োজন করে বিয়ের অনুষ্ঠান করছে, এখন যদি এক নিমিষেই সব শেষ হয়ে যায়!
অনেক কান্নাকাটির পরে, শেষ পর্যন্ত ভালোয় ভালোয় বিয়েটা হলো।

৫ বছর পরে…..
আবার রূপাদের বাসায় গেলাম।
এখন আর রুপা আপুর মুখে হাসি নেই। মুখটা মলিন হয়ে গেছে। এখন আর কথায় কথায় সে হাসে না। জোৎস্না স্নাত হাসি মুখ আজ অমাবস্যায় রুপান্তরিত হয়েছে। অন্যদিকে যে কথায় কথায় কাদঁতো “সাথি আপু” তার মুখে এখন চাঁদের হাসি। কোলে তিন বছরের ছেলে।

আন্টির কাছে শুনলাম, রূপা আপুর ডিভোর্স হয়ে গেছে। স্বামী তাকে ভীষণ ভালোবাসতো, সে আজও কাঁদে তার রূপার জন্য। আর রূপা আপুর তো পুরো পৃথিবী জুড়ে ছিলো তার স্বামী। কিন্তু হায়! একটা সন্তানের জন্য তার এই পরিণতি। অনেক হসপিটালে দৌড়িয়ে, অনেক চেষ্টা করে, পরীক্ষা করে জানা গেছে রূপা আর কোনদিন মা হতে পারবে না।

শশুর বাড়ির চাপে রূপার স্বামী আরেকটা বিয়ে করতে বাধ্য হয়।
শুনেছি, রূপা আর রূপার স্বামী অনেক চেষ্টা করছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রূপার শশুরের ভয়ংকর আচরণের কাছে তাদের হার স্বীকার করতে হলো। রূপার শশুর ছেলেকে বড় ঘরের মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়েছে, সেই মেয়ে রূপাকে মানতে নারাজ। তাই রূপাকেই নতি স্বীকার করে চির বিচ্ছেদের ভার বহন করে নিতে হয়।

মানুষের নিয়তি মানুষকে কোন পরিণতিতে নিয়ে যেতে পারে তা কোন সমীকরণ দ্বারা হিসাব মেলানো সম্ভব নয়। তাই এই হার-জিতের খেলায় নিজেকে খেলোয়াড় না ভেবে পরিক্ষার্থী ভাবাটাই শ্রেয়।

তাহলে মনে হয়, “ধৈর্য” নামক বস্তুটাকে ধারণ করে অন্তত পাশ মার্কটা নিয়ে এ অবনি ত্যাগ করা যাবে।

লেখকঃ তাসলিমা ইসলাম সানা

এই বিভাগের আরও সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: মুহাম্মদ আমীরুল হক পারভেজ চৌধুরী

সম্পাদকীয় কার্যালয়ঃ
এডুএইড ৪র্থ তলা ৭৮ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা ১০০০
ইমেইল : eduaid21@gmail.com

© কপিরাইট এডুএইড ২০২৪।   ওয়েবসাইট নির্মানেঃ Contriver IT

সর্বশেষঃ