করোনা মহামারীর কারণে দেশ সবদিক দিয়েই বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। করোনায় প্রায় টালমাটাল উচ্চ শিক্ষাব্যবস্থা। করোনা মহামারী নিয়ে গত বছরের ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। তখন পর্যন্ত বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ইয়ার এবং সেমিস্টারের পরীক্ষা চলমান ছিল। সম্প্রতি কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা গ্রহণ শুরু করে দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কিন্তু বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে হল খোলার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পরীক্ষা গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে শিক্ষামন্ত্রণালয়। ফলে অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষামন্ত্রণালয়ের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার কারণে আবারো বন্ধ হয়ে যায় সকল প্রকার পরীক্ষা। এতে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া লাখো শিক্ষার্থীর জীবন। পরীক্ষা নেওয়ার কোনো সুয়োগ নেই, আবার কবে থেকে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে সেটিও অজানা। ফলে বড় ধরণের জটে পরতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
শুধু জট নয়; সরকারী চাকরির নির্ধারিত বয়সসীমাও অতিক্রম হচ্ছে অনেকের। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট ছিল না সেগুলোতেও এখন প্রায় এক বছরের সেশনজট শুরু হয়েছে। বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও এ কারণে বিপাকে পড়েছেন।
জানা যায়, গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণার পর এপ্রিল থেকেই অনলাইনে ক্লাশ শুরু করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আর মে মাস থেকে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণের অনুমতিও দেওয়া হয়। কিন্তু দ্বিতীয়বার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদেরও আর কোনো ধরণের পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এছাড়াও গত জুন থেকে অনলাইনে ক্লাস শুরু করে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। চলতি বছরে শুরু থেকে পাবলিক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা গ্রহণ শুরু হয়। এর মাধ্যমে সেশনজট কমিয়ে আনার চিন্তা করলে হল খোলার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আবারো পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা আসায় বড় ধরণের বিপদে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা।
করোনা শুরু হওয়ার পর বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস শুরু হলেও সিংহভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বন্ধ রয়েছে। এদিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও চলছে দায়সারাভাবে। কোর্স শেষ করতে নামেমাত্র অনলাইন ক্লাস চালু রেখেছে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়। অনলাইন ক্লাস থেকে তেমন কিছুই ফলাফল আসছেনা অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
এসব অনিশ্চয়তা নিয়ে দেশের পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা খুব একটা স্বস্তিতে নেই। সাধারণত বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে গ্রামের মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা। এদের একটা বিরাট অংশ টিউশনি এবং পার্ট-টাইম কাজের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি কেউ কেউ পরিবারের খরচও মিটিয়ে থাকে। অনেকে আবার নিজের এবং পরিবারের বোঝা কাঁধের ওপর বহন করে চলেছে।
এছাড়াও, সাধারণত বছরের শেষ মাসগুলোতে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা হয়ে থাকে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে দেশের সেরা মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া হয়। কিন্তু এবারের ঘটনায় তা সম্ভব হয়নি।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক মো. মুকুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হয় তা এখন বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নিয়েছে এবং এর পরিধি প্রায় বিশ্বের প্রতিটি দেশ ও অঞ্চলে সগৌরবে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। অন্যান্য দেশের ন্যায়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশ হিসেবে বাংলাদেশেও এই ভাইরাস ব্যাপকভাবে হুমকি স্বরূপ অভিভূত হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে বিগত বছরের ১৭ মার্চ হতে অদ্যবধি সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।’
তিনি বলেন, ইউনিসেফের তথ্য মতে, ‘বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের আরো ১৩ টি দেশে গত বছরের মার্চ হতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লাগাতার বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার পাশাপাশি টারশিয়ারি বা উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পারছে না। এতে কেবল শিক্ষার আসল উদ্দেশ্যই ব্যহত হচ্ছে না তার পাশাপাশি দেশ আগামীর সম্ভাবনাও হারাচ্ছে। করোনার প্রথম ধাক্কা সাময়িকভাবে মোকাবিলা করে অনলাইন কার্যক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। যদিও প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের ফাইনাল পরীক্ষা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নেওয়া হয়েছে, তবে এর ফলাফলে অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষার আপাত নেগেটিভ দিকই প্রতিয়মান হয়েছে। শিক্ষার্থীরা তাদের যথোপযুক্ত প্রস্তুতি ছাড়া তুলনামূলকভাবে ভালো ফলাফল করতে পারেনি। এর অন্যতম কারণ হিসেবে নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেটের অভাব এবং শিক্ষার্থীদের আর্থসামাজিক অবস্থানকে দূরশিক্ষণ কার্যক্রম অংশগ্রহণে অন্যতম বাধা হিসেবে দেখা গেছে।’
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মতিউর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে শিক্ষামন্ত্রণালয় বা রাষ্ট্র এটা বন্ধ করেছে। সেখানে আমার কোনো মন্তব্য নাই। কিন্তু, এটি আমাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন এবং কর্মজীবনকেও ব্যহত করেছে। এবং এটা একটা অনিশ্চয়তার মধ্যেই আছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার যে এটার শেষ কোথায়?’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়ে গেল এবং হচ্ছে এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্যে আমাদের সামনে কোনো পরিকল্পনা এবং দিক নির্দেশনা নেই। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এটা নিয়ে কোন পরিকল্পনা করেছে কিনা আমার জানা নাই। আমরা শোনা যাচ্ছে যে, ঈদের পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হবে। এইযে ক্ষতি হয়ে গেছে তারপরে আসলে কিভাবে চলবে এবং আগামী দিনে সেই ক্লাসগুলো কিভাবে হবে, পরীক্ষাগুলো কিভাবে হবে এ বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা নাই।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও নাই এমনকি রাষ্ট্রীয়ভাবেও আমরা দেখিনাই। আমরা মনে করি, ইউজিসি একটা সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারতো। এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য একটা সমন্বিত ক্লাস প্রোগ্রাম করা লাগতো। এটা নিয়ে একটা কমিটি করা যেতে পারে। এবিষয়ে শিক্ষাবিদদের নিয়ে একটা কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেরাও চিন্তা করতে পারে। দুঃখজনক ব্যাপার হলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এভাবে চিন্তা করছেনা।
যদি পুরোটা পড়ে থাকেন তবে ভয়ঙ্কর একটি সময় অপেক্ষা করছে এটা তো বুঝতে পারছেন, তাই অবশ্যই নিজের যে দক্ষতা আছে তা অবশ্যই কাজে লাগান।
নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা অনেক বেশি তাই কোনো ছোটখাটো কাজ করা আপনার সাজেনা এই জাতীয় চিন্তা মাথা থেকে অবশ্যই ঝেড়ে ফেলুন ।
যদি কোথাও কেউ আপনাকে প্রস্তাব দেয় সে দুই এক মাস ফ্রী কাজ করতে, করুন।
তবুও কাজ শিখে নিন,কারণ এতে আপনি হয়ে উঠবেন একজন দক্ষ কর্মী। এবং এই শিখে নেয়াটাই আপনার ভবিষ্যৎ করে দেবে ইংশাআল্লহ।