বাংলাদেশের উন্নয়ন, আল জাজিরার প্রহসন ও তারুণ্যের দোদুল্যমান মন

এডুএইড ডেস্ক

দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা অনেকেরই যন্ত্রণার কারণ হওয়াটা স্বাভাবিক। স্বাধীন বাংলাদেশে বসবাসকারী পাকিস্তানপন্থী, স্বাধীনতাবিরোধী চক্র, এবং একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের বিভ্রান্ত অনুসারীরা দেশকে নিয়ে আপাত চকচকে কিন্তু অন্ত্যজ ভঙ্গুর মিথ্যা তথ্য অতীতেও প্রচার করেছে, বর্তমানেও করছে, ভবিষ্যতেও করবে।

তবে দিনদুয়েক আগে বিদেশি গণমাধ্যম আল জাজিরার একটি বহুল আলোচিত রিপোর্ট অতীতের সব মিথ্যাচারকে ছাপিয়ে গিয়েছে। কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম এই আল জাজিরা যে শুধু বাংলাদেশকে নিয়েই মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে তা নয়। ১৯৯৬ সালে আত্নপ্রকাশ করা এই সংবাদ চ্যানেলটি তাদের প্রকাশিত দুরভিসন্ধিমূলক মিথ্যা সংবাদ প্রচারের জন্য দেশে দেশেই নিষিদ্ধ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদ মাধ্যম মধ্য প্রাচ্যেই বেশি নিষিদ্ধ হয়েছে৷ কিন্তু কেন?

২০০০ সালের মে মাসে বাহরাইনের সিটি নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেদন তৈরী করে আল জাজিরা। বাহরাইনের এই সিটি নির্বাচনকে ইহুদীদের পৃষ্ঠপোষকতার নির্বাচন বলে বেফাঁস মন্তব্য করায় বাহরাইনে এর সম্প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়। ইরাকে ২০০৪ সালে প্রথমবার এবং দ্বিতীয় দফায় ২০১৩ সালে নিষিদ্ধ হয় চ্যানেলটি।

উগ্রবাদী ইসলামপন্থীদের মদদ দেয়াসহ অসংখ্য অভিযোগের দায়ে ২০১১ সালে মিশরে নিষিদ্ধ হয়। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় বিদ্রোহীদের পক্ষাবলম্বন করে আল জাজিরা৷ এবং এই কারনে বিশ্ববাসীর নিন্দা কুড়ায় এই চ্যানেলটি। ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে ৫ দিনের জন্য ভারতেও নিষিদ্ধ হয় এটি৷

ইসরায়েলী কারাগার থেকে বন্দী বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে ২০০৮ সালে সামির কান্তার নামক এক হত্যাকারীকে মুক্তি দেয়া হয়। চার জন ইসরায়েলী নাগরিককে হত্যাকারী এই সামির কান্তারের জন্মদিনের লাইভ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে ইসরায়েলেও নিষিদ্ধ হয় আল জাজিরা।

বাংলাদেশ নিয়ে আল জাজিরা অপপ্রচার চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই। ২০১৩ সালের ৫ মে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নস্যাৎ করতে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির নামে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তান্ডব চালায় হেফাজতে ইসলাম। তারা প্রতিবেদনে বলেছে যে, ৫ মে শত শত হেফাজত কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে৷ এবং জুরাইন গোরস্তানের তারা একজন বাক প্রতিবন্ধীর সাক্ষাৎকার নেয়। দেখা যায়, একজন বাক প্রতিবন্ধী সাক্ষাৎকারে বুঝাতে চাচ্ছেন যে,এখানে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।

কিন্তু এই প্রতিবন্ধীর স্বজনেরা বলেছেন, তাকে আগে থেকেই শিখিয়ে দেয়া হয়েছিল। এখানে একটা প্রশ্ন হলো, এত এত মানুষ থাকতে আল জাজিরা কেন এই বাক প্রতিবন্ধী ছেলেটার সাক্ষাৎকার নিতে গেলো? সুতরাং এখানে, প্রতিবন্ধী ছেলেটার স্বজনদের কথাই বিশ্বাসযোগ্য। যুদ্ধাপরাধীদেরকে ইসলামি নেতা হিসেবে প্রচার করা সংবাদমাধ্যম থেকে এর বেশি অবশ্য কি আর আশা করা যেতে পারে?

গত ২ ফেব্রুয়ারি আল জাজিরার প্রচারিত, ‘ অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স মেন’ নামের একখানা থ্রিলারধর্মী অন্তঃসারশূণ্য তথ্যচিত্র বাংলাদেশের কিছু মানুষকে ভার্চুয়াল জগতে ব্যস্ত থাকার উপকরণ হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। তথ্যচিত্রে ডেভিড বার্গম্যান,তাসনিম খলিল ও জুলকারনাইন শেরখান ওরফে সামিকে দেখা গিয়েছে। তাসনীম খলিল আর সামি এমন গুরুত্বপূর্ণ কেউ নন। বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত তাসনীম খলিল সরকারের বিরোধিতা করবেন এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আবার ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সামির প্রতারণার ইতিহাস অকাট্য প্রমাণসহ বেরিয়ে এসেছে। তাই ব্যক্তিক্ষোভে জর্জরিত এক সাংবাদিক আর প্রবাসী প্রতারককে নিয়ে চিন্তিত হওয়া মানে তাদের গুরুত্ব দেয়া। তবে একজন ব্যক্তির উপস্থিতি এবং উদ্দেশ্য কিছুটা আলোচনার দাবি রাখে।

ধর্মে ইহুদী কিন্তু জাতে ব্রিটিশ, স্বভূমে গুরুত্বহীন এক সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান বৈবাহিক সূত্রে বেশ কিছুদিন বাংলাদেশে অবস্থান করেছেন। কাজ করেছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রের সাথেও।যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রে থাকা বার্গম্যান মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্নবিসর্জনকারী ৩০ লাখ শহীদদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন৷ বারবার আদালত অবমাননা করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন এই ডেভিড বার্গম্যান।যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে সব সময় সোচ্চার এই বার্গম্যান পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোতে লবিস্ট নিয়োগের গুরু দায়িত্ব পালন করতেন৷ যুদ্ধাপরাধীদের কোল ঘেঁষে থাকা এই সাংবাদিক একজন ইহুদী হয়ে ইসলাম ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা নেতাদের পক্ষে থাকেন কিসের বিনিময়ে তা সচেতনমন মাত্রই বুঝতে সক্ষম হবে। অথচ সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা মহাপবিত্র কুরআন মাজীদে নির্দেশ দিয়েছেন, “”হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না (সূরাহ আল-মায়িদাহ, আয়াত : ৫১)”। তাহলে এসব ইসলামজীবি নেতা শ্রেষ্ঠ ধর্ম, শান্তির ধর্ম ইসলামের কেমন খিদমতগার, তা স্পষ্ট বোঝাই যায়।

তাসনীম খলিল সেনাপ্রধানের চোখে উচ্চাভিলাষ দেখেছেন। একজন সেনাপ্রধানের চোখে উচ্চাভিলাষ দেখা যে অপরাধ হতে পারে তা জানা না থাকলে মিনস্কের বিক্ষোভের ছবি দিয়ে ঢাকার মানুষকে রাস্তায় নামানোর স্বপ্ন দেখা যে রাষ্ট্রদ্রোহ, তা আলবৎ জানা আছে। ফ্রিডম পার্টির ক্যাডার মোস্তফা যে সেনাপ্রধানের ভাই টিপুর হত্যাকারী, তা কৌশলে আল জাজিরা এড়িয়ে গেলেও ঢাকায় বেড়ে ওঠা অনেকেরই তা জানা। আল জাজিরা যতদিন না পর্যন্ত সব ইমেইল এবং লেনদেনের স্ক্রিনশট না দিয়ে পরিপূর্ণ নথি প্রকাশ করবে, ততদিন পর্যন্ত এই তথ্যচিত্র বিশ্বাসযোগ্য হবেনা। কারণ স্ক্রিনশট বানানো এই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে নিতান্তই ছেলেখেলা। আবার সেনাপ্রধানের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে পলাতক দুই ভাইয়ের উপস্থিতি শুধু হালকা রঙয়ের ছবিতে আছে, কিন্তু ভিডিওতে নেই। এসব অসঙ্গতিপূর্ণ প্রকাশ সরকারবিরোধী কিছু মানুষের মনকে সাময়িক তৃপ্তি দিতে পারে, কিন্তু সচেতন মানুষকে ধোঁকা দিতে পারেনা।

আইএসপিআর আল জাজিরার এই অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা জানিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেভিড বার্গম্যান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালে শাস্তিপ্রাপ্ত। (জুলকারনাইন শেরখান) সামিকে মাদকাসক্তির অভিযোগে অনেক আগেই বাংলাদেশ ক্যাডেট একাডেমি থেকে অনেক আগেই বহিষ্কার করা হয়েছে। ইসরায়েলের সাথে বাংলাদেশের কোনো কূটনীতিক সম্পর্ক নেই৷ সুতরাং, ইসরায়েল থেকে কিছু আমদানির প্রশ্নই উঠে না।

যারা নিজেদের স্বার্থে এক ইহুদিকে কাজে লাগায়, তাদের মুখে অন্তত ইসরায়েল বিরোধিতার কথা মানায় না। কাতার কিছুদিন আগে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেছে। কাতারে আছে রাজতন্ত্র। সেই কাতারি গণমাধ্যম আয়নায় নিজেকে না দেখেই অন্যদের ব্যাপারে মাথা ঘামানোর কারণ একটিই। তা হল সেই নির্দিষ্ট অনুষ্ঠান প্রচারের বাজেট পাওয়া। বাংলাদেশ নিয়ে এই তথ্যচিত্র বানাতে টাকা কারা দিয়েছে তা খতিয়ে দেখা দরকার।

কাতারভিত্তিক রিভাইভাল অব ইসলামিক হেরিটেজ নামের এক এনজিও ২০০১-২০০৬ সালে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ উত্থানে অর্থসহায়তা প্রদান করে বড় ভূমিকা রেখেছিলো। সেই কাতারেরই আল জাজিরার এসব তথ্যচিত্রের মূল উদ্দেশ্য পরিষ্কার। আল জাজিরাকে তথ্যচিত্র বানাতে টাকা দেয়া মহলটি চায় রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতন। শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলা বাংলাদেশ, তাদের ঈর্ষার কারণ।

করোনা মহামারির সময়ে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা রেখেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতু, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ, মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ সহায়তা প্রদান,৬৬ হাজার ১৮৯ গৃহহীন পরিবারকে গৃহ নির্মাণ করে দেয়া, তথ্য প্রযুক্তির বিস্ময়কর সাফল্য, বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার অক্লান্ত পরিশ্রম দেশবিরোধী-শক্তির রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। ১৯৭১ সালে যারা বাংলাদেশ চায় নি, কেবল তারাই বাংলাদেশের এই অভূতপূর্ব উন্নয়নে হিংসাপরায়ণ হবে।

বাংলাদেশের শিক্ষিত তরুণদের একটি বড় অংশ ভার্চুয়ালি রাজনীতির খবর রাখলেও পলিটিক্যালি লিটারেট নন। এই শিক্ষিত তরুণরা দোদুল্যমান এবং নিজেদের রাজনৈতিক আদর্শ এখনো পোক্ত নয়। দলীয় আদর্শ আর উন্নয়নের গ্রহণযোগ্য এবং তথ্যবহুল ফিরিস্তির পাশাপাশি জঙ্গিবাদের ঝুঁকি সম্পর্কে এই তরুণদের লিটারেট করার কাজটি রাজনীতিবিদদের করতে হবে।

এই তরুণদের বুঝতে হবে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির বিরোধিতা করা তুরস্ক কেন বাংলাদেশের সাথে অস্ত্র চুক্তি এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য জোরদার হওয়ার পর থেকে এই ব্যাপারে নীরব।

একটি রাজনৈতিকভাবে শিক্ষিত রাজনীতিসচেতন সমাজ গড়ে তোলা প্রয়োজন। রাজনৈতিক শিক্ষায় দীনহীন কিন্তু আবেগে টইটম্বুর তারুণ্য শুধু ভুল সিদ্ধান্তই নিতে পারে, কোন মঙ্গল বয়ে আনতে পারেনা। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে এই রাজনীতি-সচেতন তারুণ্যকে প্রকৃত রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে, স্বাধীন চিন্তার দুয়ার খোলা রেখে, নেতৃত্বের ক্যারিশমায় আকৃষ্ট করে পাশে রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন।

এই বিভাগের আরও সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশক: মুহাম্মদ আমীরুল হক পারভেজ চৌধুরী

সম্পাদকীয় কার্যালয়ঃ
এডুএইড ৪র্থ তলা ৭৮ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা ১০০০
ইমেইল : eduaid21@gmail.com

© কপিরাইট এডুএইড ২০২৪।   ওয়েবসাইট নির্মানেঃ Contriver IT

সর্বশেষঃ