আমাদের আশপাশে যা দেখি এবং যা কিছুর ভর আছে তাকে পদার্থ বলে। একটি মাত্র উপাদান দিয়ে তৈরি হয় মৌলিক পদার্থ এবং একাধিক মৌলিক পদার্থের সমন্বয়ে তৈরি হয় যৌগিক পদার্থ
কিছু পদার্থ কঠিন, কিছু তরল। আর আছে গ্যাসীয় পদার্থ। বিভিন্ন পদার্থের প্রকৃতি ও গঠন বিভিন্ন রকম হলেও সবই মূলত কয়েকটি অত্যন্ত ক্ষুদ্র কণা দিয়ে তৈরি। এসব কণাকে বলে পরমাণু। পরমাণুগুলোর ভেতর ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন পাওয়া যায়। একটি অণুর প্রতিটি পরমাণুতে সমান সংখ্যক ইলেকট্রন ও প্রোটন থাকে। প্রতিটি মৌলের পরমাণুর ভেতরকার প্রোটন সংখ্যা আলাদা।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
অ্যাটম শব্দটি গ্রিক শব্দ অ্যাটমস থেকে নেওয়া হয়েছে। মানে হলো অবিভাজ্য, যাকে ভাগ করা যায় না।
ডেমোক্রিটাসের মতবাদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন প্লেটো ও অ্যারিস্টটল।
ডাল্টন পরমাণু মতবাদ দেন ১৮০৩ সালে।
আধুনিক পরমাণুবাদের জনক জন ডাল্টন।
একটি মৌলের সব পরমাণুর আকার, ভর ও রাসায়নিক ধর্ম একই।
পদার্থের ভিন্নতার কারণ হলো এদের গঠন।
মরিচার রাসায়নিক নাম হাইড্রেটেড আয়রন অক্সাইড।
বায়ু এক ধরনের মিশ্র পদার্থ।
লবণ-পানির মিশ্রণে বিদ্যমান যৌগিক পদার্থ লবণ ও পানি।
সর্বপ্রথম ক্ষুদ্রতম কণার মতবাদ দেন ডেমোক্রিটাস।
ডেমোক্রিটাস পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণার নাম দেন অ্যাটম বা পরমাণু।
একই পদার্থের পরমাণু যুক্ত হয়ে গঠিত হয় মৌলিক পদার্থ।
দুটি অক্সিজেন পরমাণুযুক্ত হয়ে গঠন করে অক্সিজেন অণু।
একটি অক্সিজেন পরমাণু ও দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু যুক্ত হয়ে গঠিত হয় পানির অণু।
এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত মৌলিক পদার্থের সংখ্যা ১১৮।
প্রকৃতিতে প্রাপ্ত মৌলিক পদার্থের সংখ্যা ৯৮।
লবণের রাসায়নিক নাম সোডিয়াম ক্লোরাইড।
চিনির রাসায়নিক নাম সুক্রোজ।
লবণকে ভাঙলে পাওয়া যাবে সোডিয়াম ও ক্লোরিন।
চকের রাসায়নিক নাম ক্যালসিয়াম কার্বনেট।
কৃত্রিমভাবে তৈরি মৌলিক পদার্থ ২০টি।
ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে পরমাণু দেখা যায়।
পরমাণু ভেঙে পাওয়া যায় ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন।
পরমাণুর কেন্দ্রে থাকে নিউট্রন ও প্রোটন।
পরমাণুর কেন্দ্রের চারদিকে বৃত্তাকার কক্ষপথে ঘুরতে থাকে ইলেকট্রন।
সর্বজনীন দ্রাবক হলো পানি।
জৈব ও অজৈব অনেক দ্রাবকে দ্রবীভূত করতে পারে পানি।
চিনি, ভিনেগার, স্পিরিট, গ্লুকোজ—এগুলো জৈব পদার্থ।
দুই বা ততোধিক পরমাণু যুক্ত হয়ে তৈরি করে অণু।
গ্যাসীয় মৌলের দুটি পরমাণু যুক্ত হয়ে গঠন করে গ্যাসীয় অণু।
পানির সংকেত H2o।
একটি যৌগ কী কী মৌল ও পরমাণুগুচ্ছ দিয়ে এবং কী অনুপাতে তৈরি বোঝা যায় যৌগিক পদার্থের সংকেত দ্বারা।
ডাল্টনের পরমাণুবাদ মতে, পরমাণু অবিভাজ্য অর্থাৎ একে ভাগ করা যায় না। যদিও আধুনিক বিজ্ঞান সেটা ভুল প্রমাণ করেছে।
জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর
মরিচা কাকে বলে?
উত্তর : লোহার তৈরি জিনিসপত্র কিছুদিন বাইরে রেখে দিলে এর ওপর লালচে বাদামি একটি আস্তরণ পড়ে, একে মরিচা বলে। এর রাসায়নিক নাম হাইড্রেটেড আয়রন অক্সাইড। লোহার সঙ্গে বাতাসের অক্সিজেন ও পানির বিক্রিয়ায় এটি তৈরি হয়।
কোন মৌলের প্রোটন সংখ্যা ৮?
উত্তর : অক্সিজেনের প্রোটন সংখ্যা ৮।
ডাল্টনের পরমাণুবাদ কী?
উত্তর : পদার্থ অত্যন্ত ক্ষুদ্র পরমাণু দ্বারা গঠিত। একে আবার বিভাজন সম্ভব নয়। এ মতবাদই ডাল্টনের পরমাণুবাদ।
পর্যায় সারণি কী?
উত্তর : বিভিন্ন মৌলের মধ্যে ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের মিল এবং এসব ধর্মের ক্রমপরিবর্তন দেখানোর জন্য মৌলগুলোকে যে পর্যায় ও সারণিতে সাজানো হয়, সেটাকে পর্যায় সারণি বলে।
সর্বজনীন দ্রাবক কাকে বলে?
উত্তর : যে দ্রাবক অনেক জৈব ও অজৈব দ্রবকে দ্রবীভূত করে তাকে সর্বজনীন দ্রাবক বলে। যেমন পানি।
রাসায়নিক প্রতীক কাকে বলে?
উত্তর : কোনো মৌলের পূর্ণ নামের সংক্ষিপ্ত প্রকাশকে ওই মৌলের প্রতীক বলে। যেমন—অক্সিজেনের প্রতীক O।
উদ্দীপক
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক সবাইকে বললেন হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন দুটি মৌলিক পদার্থ। এই দুটির সমন্বয়ে তৈরি হয় পানি, যা যৌগিক পদার্থ।
ক) খাবার লবণের সংকেত কী?
খ) চিনি মৌলিক পদার্থ নয় কেন?
গ) উদ্দীপকের প্রথম দুটি পদার্থ ভিন্ন ধরনের কেন, ব্যাখা করো।
ঘ) উদ্দীপকের যৌগিক পদার্থটিকে সর্বজনীন দ্রাবক বলার কারণ আলোচনা করো।
উত্তর :
ক) খাবার লবণের সংকেত NaCl।
খ) মৌলিক পদার্থকে রাসায়নিকভাবে বিশ্লেষণ করে অন্য কোনো বস্তুতে রূপান্তরিত করা যায় না। আবার, যৌগিক পদার্থকে রাসায়নিকভাবে বিশ্লেষণ করলে একাধিক মৌলিক পদার্থ পাওয়া যায়। চিনিকে রাসায়নিকভাবে বিশ্লেষণ করলে মৌলিক পদার্থ C, H ও O পাওয়া যায়। তাই চিনি যৌগিক পদার্থ।
গ) এখন পর্যন্ত ১১৮টি মৌলিক পদার্থ আবিষ্কৃত হয়েছে, প্রত্যেকটিই একে অপরের থেকে আলাদা। উদ্দীপকের মৌলিক পদার্থ দুটি অর্থাৎ হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন দুটি ভিন্ন ধরনের মৌলিক পদার্থ। হাইড্রোজেনের প্রতীক H, অক্সিজেনের প্রতীক O। প্রতিটি মৌলিক পদার্থের পারমাণবিক সংখ্যা ভিন্ন। হাইড্রোজেনের পারমাণবিক সংখ্যা ১, অক্সিজেনের ৮। হাইড্রোজেন পরমাণুর কেন্দ্রে একটি প্রোটন ও বাইরে একটি ইলেকট্রন থাকে। আর অক্সিজেনের পরমাণুর কেন্দ্রে ৮টি প্রোটন ও ৮টি নিউট্রন এবং বাইরে ৮টি ইলেকট্রন। এসব কারণে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন দুটি ভিন্ন মৌলিক পদার্থ।
ঘ) উদ্দীপকের যৌগিক পদার্থটি হলো পানি।
পানিকে সর্বজনীন দ্রাবক বলা হয়; কারণ পানিতে অনেক কিছু সহজে দ্রবীভূত হয়।
পানি একটি পোলার যৌগ। পানির কোনো স্বাদ, বর্ণ বা গন্ধ নেই। পানিতে মোটামুটি সব ধরনের জৈব ও অজৈব পদার্থ কমবেশি দ্রবীভূত হয়। কাজটি অন্য কোনো দ্রাবক দ্বারা সম্ভব নয়। NaCl, NaHCO3, ফিটকিরি প্রভৃতি অজৈব পদার্থ সাধারণ তাপমাত্রায় দ্রবীভূত হয়। ধাতব পদার্থ সাধারণ তাপমাত্রায় দ্রবীভূত না হলেও বেশি তাপমাত্রায় হয়ে থাকে। আবার চিনি, ভিনেগার, স্পিরিট, ভিটামিন ‘সি’, গ্লুকোজ প্রভৃতি জৈব পদার্থও পানিতে সহজে দ্রবীভূত হয়। তাই পানি সর্বজনীন দ্রাবক।
গ্রন্থনা : আল সানি