আতিকুর রাহিম:
সরকারি বাঙলা কলেজে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর সমাপনী উপলক্ষে মঞ্চস্থ হলো বাঙলা কলেজ বধ্যভূমি নিয়ে নির্মিত গনহত্যার পরিবেশ থিয়েটার “এ বেদনার ব্যাকরণ নেই”।
বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) রাত ৮ টায় বাঙলা কলেজ বধ্যভূমির পাদদেশে নাটকটি পরিবেশন করেন দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাস থিয়েটার বাঙলা কলেজ যুব থিয়েটার।
বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ফেরদৌসী খানের গবেষণাধর্মী গ্রন্থ ‘বাঙলা কলেজ বধ্যভূমি’র আলোকে এই নাটকটি নির্মাণ করেন ক্যাম্পাস থিয়েটার আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হাবিব তাড়াশী।
এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ফেরদৌসী খান বলেন, ‘‘সর্বত্র আলোচিত, স্বীকৃত এক ঐতিহাসিক স্থান বাঙলা কলেজ বধ্যভূমি। ইতিহাসের বর্বরতম হিংস্রতা, পাশবিকতা ও নির্মমতার স্মৃতিচিহ্ন বহন করছে এই বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা যে পৈশাচিক হনন উৎসব বাঙলা কলেজ প্রাঙ্গণে চালিয়েছে, তা চিন্তাতীত ও বর্ণনার অযোগ্য। তাদের নীচ ও কদর্য, পশুবৎ ও পাষণ্ডী আচরণ এবং অত্যাচার সর্ব মহলে ঘৃণিত সত্য হয়ে অদ্যাবধি বর্তমান। সেই পাশবিক নিষ্ঠুরতার ও দুঃসহ বেদনার স্মৃতি ‘এ বেদনার ব্যাকরণ নেই’।”
নাট্যকার হাবিব তাড়াশী জানান, “১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের নৃশংসতায় ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ শহিদ হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এটাই সবচেয়ে বড় গণহত্যা। মিরপুর ছিল মুক্তিযুদ্ধের শেষ রণক্ষেত্র। বাঙলা কলেজ বধ্যভূমি শুধু মিরপুরেই নয়, বাংলাদেশের মধ্যেও অন্যতম। ‘এ বেদনার ব্যাকরণ নেই’ নাটকটিতে বাঙলা কলেজ বধ্যভূমিতে নিহত শহিদের বেদনার স্মৃতি ফুটে উঠেছে।”
ইতিমধ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দেশের ৬৪ জেলায় পরিবেশিত হচ্ছে গণহত্যার পরিবেশ থিয়েটার। দেশব্যাপী এই নাট্যযজ্ঞের উদ্বোধন করেছেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। তাঁর ভাবনা ও পরিকল্পনায় দেশের নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতাদের অংশগ্রহণে বাস্তবায়িত হচ্ছে এই আয়োজন।
লিয়াকত আলী লাকী বলেন, “আমাদের জন্য এটা এক সৌভাগ্য। মুজিব বর্ষের পরপরই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছাতে যাচ্ছি গণহত্যার পরিবেশ থিয়েটার নিয়ে। শিল্পের সব শাখাই মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কাজ করেছে, স্বাধীনতার ৫০ বছর যে গণহত্যারও ৫০ বছর, তা এই পরিবেশ থিয়েটারের মাধ্যমে দেশব্যাপী তুলে ধরতে চাই। শিল্প-সাহিত্য ইতিহাসকে সজীব রাখে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। সারা দেশে এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা গণহত্যা-বধ্যভূমি তথা মুক্তিযুদ্ধের সার্বিক ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের কাছে শৈল্পিকভাবে পৌঁছাতে চাই।”
নাটক মঞ্চায়নকালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসলিমা বেগম, বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ও গবেষক অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী, সরকারি সঙ্গীত কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর কৃষ্টি হেফাজ, সরকারি বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ফেরদৌসী খান এবং উপাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর হোসেনসহ সরকারি বাঙলা কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সাবেক বর্তমান নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির বাহিরে কোন থিয়েটারের একক প্রযোজনা হিসেবে এটি প্রথম পরিবেশ থিয়েটার।